রাজশাহী জেলায় অস্তিত্ব সংকটে আবাদি কৃষি জমি
সুজলা,সুফলা শস্য-শ্যামলায় পরিপূর্ণ ছিল রাজশাহী জেলার আবাদি কৃষি জমি। জেলার সকল উপজেলায় আবাদি কৃষি জমি ধ্বংস করে কুকুর খনন করার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। ফলে দুর্গাপুর, পুঠিয়া, মোহনপুর, বাগমারা, বাঘা ,চারঘাট, গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় আবাদি কৃষি জমি ক্রমেই কমতে শুরু করেছে।উপজেলা গুলোর মোট ভূমির সিংহভাগই কৃষিজমি। পুকুর খননকারীদের আগ্রাসনের কারণে উক্ত উপজেলার কৃষি উপযোগী আবাদি জমি রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কেন্দ্র কৃষিভিত্তিক শিল্প।
এখানকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজে নিয়োজিত। এই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে পুকুর খননকারীদের আগ্রাসনে খাদ্যের প্রধান উৎস কৃষি জমি এখন অস্তিত্ব সংকটে। দিন দিন ব্যাপক হারে কমছে জেলার সর্বত্র কৃষি জমি । এই জেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ব্যাপক কমে যাওয়ায় কৃষকরা চরম হতাশ ও চিন্তিত। সেই সাথে সাথে কৃষকের সংখ্যাও নগণ্য হয়েছে ।এভাবে দিনের পর দিন জেলার সকল উপজেলায় কৃষি জমি কমতে থাকলে অধিকাংশ মানুষের জীবন জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে। ইতিমধ্যেই অনেক মানুষ কৃষি কাজ ছেড়ে পেশা বদল করেছে।ঊ জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ শহরে পাড়ি জমাচ্ছে বিভিন্ন কর্মের সন্ধানে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশের জনসংখ্যা।
কিন্তু সে তুলনায় কৃষি জমি এক শতাংশ বাড়ছে না ।কৃষি জমির পরিমান দিন দিন কমতে থাকায় এই অঞ্চলে পরিবেশের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ।খাদ্য নিরাপত্তা ,কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চালু রাখতে এই কৃষি ক্ষেত্রের গুরুত্ব অনেক বেশি।কারণ এই অঞ্চলের খাদ্য শস্যের চাহিদার শতভাগ সরবরাহ হয়ে থাকে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে। এই ঘরিষ্ঠ সংখ্যক কৃষক বর্তমানে তারা নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
বিশেষ করে তাদের চাষযোগ্য ভূমি চলে যাচ্ছে পুকুর খননের আগ্রাসনে। ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক তারা এখন তাদের স্বীয় অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারছে না। ব্যাপকহারে কৃষি জমি ধ্বংস করে পুকুর খনন করার কারণে প্রতি বছর এ অঞ্চলের জমির পরিমাণ ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বর্তমানে কৃষি উৎপাদনে জেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ব্যাপক কমে যাওয়ায সামাজিক অর্থনীতি তথা অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্মুখীন। জেলায় বর্তমানে বিদ্যমান কৃষি জমি সঠিকভাবে রক্ষা করা হলে এ অঞ্চলের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করার অপার সম্ভাবনা এখনো দৃশ্যমান।
কিন্তু অপরিকল্পিত অধিক হারে পুকুর খননের মাধ্যমে কৃষি জমি ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সে সম্ভাবনা দিন দিন ভাটা পড়ছে।এই জেলার সকলউপজেলায় প্রচুর পরিমাণ ধান, গম ,পাট, আলু ,ভুট্টা পিয়াজ ,সরিষা, মরিচ ,পটল ,বেগুন ঢেড়শ, লাউ ,কুমড়া ,ও করলা ইত্যাদি শস্য ও শাকসবজি চাষাবাদে এবং উৎপাদনে অনেক খ্যাতি ও সুনাম ছিল । কিন্তু দিনের পর দিন এই উৎপাদশীল আবাদি কৃষি জমি পুকুর খননের আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাদ্য শস্য ও শাকসবজি চরম সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই এই জেলার কৃষকের জীবন ও প্রাণ উৎপাদনশীল আবাদি কৃষি জমি, তা রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
বিশেষ করে যেমন ভাবে পরিবেশ, প্রাকৃতিক জলাধর ,নদ-নদী ,খাল বিল ,দীঘি, ঝর্না এবং জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ও রক্ষায় যেমন দেশের প্রচলিত আইন-কানুন , নিয়ম নীতি এবং সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়, তেমনি ভাবে কৃষি জমি রক্ষায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা থেকে বের হয়ে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ও কৃষি নীতিমালা সহ কৃষি জমি সংরক্ষণ ও রক্ষায় সরকারের বিশেষ নির্দেশনা প্রতিপালনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন । পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিনিধিদের কঠোর দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকা দরকার ।কারণ পুকুর খননকারীদের ধ্বংসাত্মক কাজে প্রতিবাদ সহ তাদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন। সেই সাথে সাথে স্থানীয় কৃষকদের ভূমিকাও কঠোর হওয়া দরকার। সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় খনন
কারীদের কৃষি জমি বন্দোবস্তো দেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং খননকারীদের নানা কৌশল থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে হবে। তাদের অযাচিত প্রভাব ও ভয়ভীতিতে ভীত না হয়ে তাদের অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির দ্বারস্থ হওয়া একান্ত প্রয়োজন ।এ ছাড়াও এলাকা ভিত্তিক শিক্ষিত এবং সচেতন মানুষদের মধ্যে কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে সামাজিকভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কৃষি জমিতে পুকুর খননের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে থেকে জানা যায় যে ,খননকারীরা অধিকাংশই অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতাদের মাধ্যমে প্রথমে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খনন কাজ শুরু করে থাকে। পরবরর্তীতে
পরিবেশ পরিস্থিতি ভেদে কোন কোন সময় উপজেলা প্রশাসনের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে নিরাপদ ভাবে ফসলী জমিতে দিন -রাত পুকুর খনন কাজ অব্যাহত থাকে। বর্তমানে বিশেষ করে দুর্গাপুর , পুঠিয়া, পবা ও মোহনপুর বাগমারা উপজেলায় আবাদি কৃষি জমির অস্তিত্ব সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। খননকারীদের আগ্রাসন থেকে জেলার বিদ্যমান
কৃষি জমি রক্ষায় জেলা প্রশাসন , উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা ও যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ অপরিহার্য।